বিশ্বজুড়ে কোটি কোটি ক্যাথলিক খ্রিষ্টানদের হৃদয়ে গভীর শোকের ছায়া নেমে এসেছে। পৃথিবীর অন্যতম প্রভাবশালী ধর্মীয় নেতা, পোপ ফ্রান্সিস আর নেই। গতকাল সোমবার সকালে রোমে শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। স্থানীয় সময় সকাল ৭টা ৩৫ মিনিটে তাঁর মৃত্যুর খবর প্রথম জানানো হয় ভ্যাটিকান পরিচালিত টেলিভিশন চ্যানেলে। পরে একটি আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়ে বিশ্ববাসীকে এ হৃদয়বিদারক সংবাদ জানান এক জ্যেষ্ঠ কার্ডিনাল।
তিনি টেলিভিশনে বলেন, “প্রিয় ভাই ও বোনেরা, গভীর দুঃখের সঙ্গে জানাচ্ছি, আমাদের হোলি ফাদার ফ্রান্সিস আজ সকালে পরপারে পাড়ি দিয়েছেন। রোমের বিশপ আজ তাঁর সৃষ্টিকর্তার কাছে ফিরে গেছেন।”
পোপের মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গেই শুরু হয়েছে ভ্যাটিকানের প্রশাসনিক রীতি অনুযায়ী পরবর্তী কার্যক্রম। বর্তমান পরিস্থিতিতে ‘ক্যামেরলেঙ্গো’ হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন কার্ডিনাল কেভিন ফারেল। এই পদে তিনিই এখন ভ্যাটিকানের প্রশাসনিক ও ধর্মীয় কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। ২০১৯ সালে তাঁকে এই ভূমিকায় নিয়োগ দিয়েছিলেন পোপ ফ্রান্সিস নিজেই। নিয়ম অনুযায়ী, নতুন পোপ নির্বাচনের আগ পর্যন্ত তিনিই হবেন ভ্যাটিকানের ভারপ্রাপ্ত প্রধান।
আয়ারল্যান্ডের ডাবলিনে ১৯৪৭ সালে জন্মগ্রহণ করেন কার্ডিনাল কেভিন ফারেল। শিক্ষা জীবনে তিনি স্পেনের সালামানকার বিখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয় এবং ইতালির পন্তিফিকাল গ্রেগোরিয়ান ইউনিভার্সিটিতে অধ্যয়ন করেন। জীবনের একটি দীর্ঘ সময়, প্রায় তিন দশক, তিনি যুক্তরাষ্ট্রে বিভিন্ন গির্জায় ধর্মীয় দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০০৭ সালে তাঁকে ডালাসের বিশপ হিসেবে নিযুক্ত করা হয়। পরে ২০১৬ সালে তাঁকে ভ্যাটিকানে নিয়ে আসা হয় এবং তাঁকে কার্ডিনাল পদে উন্নীত করা হয়।
পোপ ফ্রান্সিস বেশ কিছুদিন ধরেই শারীরিকভাবে অসুস্থ ছিলেন। নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে চলতি বছরের ১৪ ফেব্রুয়ারি তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। পরবর্তীতে শ্বাসপ্রশ্বাস-জনিত জটিলতায় তাঁকে ভেন্টিলেশনে রাখা হয়। অবস্থার উন্নতি হওয়ায় কদিন আগেই তিনি বাড়ি ফেরেন। কিন্তু অবশেষে জীবনযুদ্ধে হার মানলেন এই মহান ধর্মনেতা।
‘দ্য হোলি সি’-এর তথ্য অনুসারে, পোপ ফ্রান্সিসের জন্ম ১৯৩৬ সালের ১৭ ডিসেম্বর, আর্জেন্টিনার বুয়েনস এইরেসে। তাঁর পূর্বনাম ছিল জর্জ মারিও বারগোগ্লিও। তৎকালীন পোপ ষোড়শ বেনেডিক্ট ২০১৩ সালে বয়স ও অসুস্থতার কারণে পদত্যাগ করলে, তিনিই হন নতুন পোপ। দক্ষিণ আমেরিকা থেকে নির্বাচিত প্রথম পোপ হিসেবে ইতিহাসে স্থান করে নেন তিনি।
পোপ ফ্রান্সিস ছিলেন উদার ও মানবিক চেতনার প্রতীক। শুধু ক্যাথলিকদের মধ্যেই নয়, তিনি নন-ক্যাথলিক এবং অন্য ধর্মাবলম্বীদের মধ্যেও ঐক্য ও সহানুভূতির আহ্বান জানিয়েছিলেন। ধর্মীয় সংস্কার, মানবতা, এবং সাম্যের প্রতীক হয়ে তিনি বিশ্বজুড়ে মানুষের হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছিলেন।