Home অর্থনীতি আগামী বাজেটে বাড়তে পারে সেবা মাশুল, সুদ ও ইজারামূল্য

আগামী বাজেটে বাড়তে পারে সেবা মাশুল, সুদ ও ইজারামূল্য

by Hill News 24
0 comments

আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরে সরকারি সেবা নিতে দেশের জনগণকে গুণতে হতে পারে বাড়তি খরচ। অন্তর্বর্তী সরকার আগামী বাজেটে বিভিন্ন খাতে মাশুল, সুদ, মুনাফা, টোল ও ইজারামূল্যের হার বৃদ্ধির পরিকল্পনা নিয়েছে।

সরকারি রাজস্ব আদায়ের মূল তিনটি উৎস হলো আয়কর, মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) ও শুল্ক। এসবের বাইরে কর ছাড়া প্রাপ্তি, অর্থাৎ নন-ট্যাক্স রেভিনিউ (এনটিআর) নামক একটি গুরুত্বপূর্ণ খাত রয়েছে। চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে এনটিআর থেকে ৪৬ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব সংগ্রহের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে, যা আগামী অর্থবছরে বাড়িয়ে ৫০ হাজার কোটি টাকায় নেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।

অর্থ বিভাগ সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগকে ইতোমধ্যে চিঠি দিয়ে জানিয়েছে, সেবা মাশুল প্রতি তিন বছর অন্তর কিংবা প্রয়োজন অনুযায়ী হালনাগাদ করতে হবে। এই হালনাগাদকরণে বিবেচনায় রাখতে হবে সেবা প্রদান ব্যয়, জীবনযাত্রার মান, মূল্যস্ফীতি এবং সামগ্রিক অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপট।

আগামী ২ জুন অর্থ উপদেষ্টা জাতীয় বাজেট উপস্থাপন করবেন। তবে সেবামূল্য বৃদ্ধির বিষয়টি বাজেট বক্তব্যে সরাসরি উল্লেখ না করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

সূত্রগুলো জানায়, আসন্ন বাজেটে জেলা পর্যায় পর্যন্ত হাটবাজারের ইজারামূল্য সামান্য বাড়তে পারে। মোবাইল কোর্টসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে জরিমানা ও দণ্ডের হারও বাড়ানোর প্রস্তাব রয়েছে। এছাড়া এক্সপ্রেসওয়ে, উড়ালসড়ক ও সেতু পারাপারে টোল, বিভিন্ন সেবা ও প্রশাসনিক মাশুলও বাড়ানো হতে পারে।

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) থেকে নেওয়া ঋণ চুক্তির অংশ হিসেবে সরকারকে রাজস্ব-জিডিপির হার বছরে ০.৫ শতাংশ করে বাড়ানোর শর্ত দেওয়া হয়েছে। এই শর্ত মাথায় রেখেই এনটিআর খাতের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হচ্ছে বলে জানানো হয়েছে।

তবে এনটিআর থেকে প্রত্যাশিত রাজস্ব আদায়ে সরকারের অসন্তোষ রয়েছে। অর্থ বিভাগের মতে, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও সংস্থাগুলোর অনাগ্রহ এবং সমন্বয়ের অভাবে রাজস্ব আদায়ে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হচ্ছে।

একজন অর্থ বিভাগ কর্মকর্তা জানান, অনেক খাতে দীর্ঘদিন ধরে পুরোনো মাশুল কার্যকর রয়েছে, কিন্তু সেগুলো হালনাগাদ করতে গেলে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলো সহযোগিতা করছে না। উদাহরণস্বরূপ, পাটপণ্য রপ্তানিতে ৩০ বছর আগের নির্ধারিত মাশুল বাড়ানোর প্রস্তাব প্রত্যাহারের জন্য আবেদন করেছে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়। অথচ অর্থ বিভাগ মাসের পর মাস ধরে বিভিন্ন খাতে মাশুল ও টোল বাড়ানো নিয়ে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে।

বর্তমানে এনটিআর-এর অন্যতম বড় উৎস হলো সরকারি বিনিয়োগ থেকে প্রাপ্ত লভ্যাংশ ও মুনাফা। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে এই খাত থেকে আয় লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৭ হাজার ৬৭৬ কোটি টাকা। এছাড়া সরকারি ঋণের বিপরীতে প্রাপ্ত সুদ থেকে ৬ হাজার ১১৪ কোটি টাকা, জরিমানা ও দণ্ড থেকে ১ হাজার কোটি টাকা এবং বিভিন্ন সেবা মাশুল থেকে ১০ হাজার কোটি টাকা আদায়ের পরিকল্পনা রয়েছে।

এ ছাড়া হাটবাজার ইজারা, টোল ও লেভি থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা এবং পুরাতন সরকারি গাড়ি ও আসবাবপত্র বিক্রি করে আরও ১৫০ কোটি টাকা রাজস্ব আয় করতে চায় সরকার।

সাবেক একজন অর্থসচিব বলেন, এনবিআরের বাইরে থেকেও রাজস্ব আয় বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে, এবং সামান্য মাশুল বৃদ্ধিতেই অনেক সময় অপ্রয়োজনীয় সমালোচনা হয়। অথচ দেশের অর্থনীতি বড় হচ্ছে, সরকারের ব্যয়ও বাড়ছে, আর এই অর্থ শেষ পর্যন্ত জনগণের কল্যাণেই ব্যয় হয়।

এই পরিবর্তনগুলো বাস্তবায়নের মাধ্যমে সরকারের রাজস্ব আয় বাড়ানোর পাশাপাশি এনটিআর খাতকে আরও কার্যকর করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে অর্থ বিভাগ।

You may also like

Leave a Comment

About Us

Lorem ipsum dolor sit amet, consect etur adipiscing elit. Ut elit tellus, luctus nec ullamcorper mattis..

Feature Posts

Newsletter

Subscribe my Newsletter for new blog posts, tips & new photos. Let's stay updated!