Home বান্দরবান শত বছর আগের আলোকচিত্র দেখে যেমন অনুভূতি হলো পাহাড়ের দর্শকদের

শত বছর আগের আলোকচিত্র দেখে যেমন অনুভূতি হলো পাহাড়ের দর্শকদের

by Hill News 24
0 comments

সারি সারি আলোকচিত্র। তাতে ধরা আছে শত বছরের ইতিহাস। ১৯০৯ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত ব্যাপ্তি। বান্দরবানসহ পার্বত্য চট্টগ্রামের সমাজ-সংস্কৃতির বহু টুকরো ছবিই ধরা আছে তাতে। তা দেখতে দেখতেই যেন স্মৃতিকাতর হয়েছেন পাহাড়ের বাসিন্দারা। ছবিতে কেউ পরিচিতজনকে খুঁজছেন, কেউ ৬০ ও ৭০ বছর আগের পরিবেশের সঙ্গে বর্তমানকে মেলাতে চেয়েছেন। চেয়েছেন সামাজিক রূপান্তরের চিত্রটাও বুঝতে।

বান্দরবানের রাজারমাঠে ‘নিজের চোখে, নিজের ভূমিতে’ শিরোনামে শত বছরের আলোকচিত্র প্রদর্শনীতে এসে এমন অনুভূতিতে আচ্ছন্ন হয়েছেন দর্শকেরা। দৃক গ্যালারির উদ্যোগে গত মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে ৪টা থেকে প্রদর্শনী শুরু হয়েছে। চার দিনের প্রদর্শনী চলবে ১৬ মে পর্যন্ত। পেশাদার নয় এমন শৌখিন আলোকচিত্রীদের ১৯০৯ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত তোলা ১২৫টি আলোকচিত্র মাঠে স্থাপন করা গ্যালারিতে প্রদর্শন করা হচ্ছে। ঐতিহাসিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ এবং পারিবারিকভাবে সংরক্ষণ করা অনেক ছবিও রয়েছে এতে।

প্রদর্শনীতে বান্দরবান পার্বত্য জেলার মানুষের ১০০ বছরের জীবনচিত্র খুঁজে পাওয়া যায়। দেখা মেলে পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর সমাজ রূপান্তরের চিত্র। তবে পাহাড়ির সামাজিক ও রাজনৈতিক ইতিহাসের সবটুকু এতে নেই। আলীকদমের শিক্ষিত তরুণ রুমতন ম্রো তেমনটাই বললেন। ছবি দেখতে দেখতে তিনি বলেন, আলোকচিত্রে গত শতকের ষাট ও সত্তরের দশকের আলোকচিত্রে বোমাং রাজপরিবারের জীবনচিত্র এসেছে, আশি ও নব্বইয়ের দশকে শহরের নৃত্য-গান, শিক্ষার পরিবেশ, ম্রোদের শিকারি জীবন, জুমচাষ সম্পর্কেও জানা যাচ্ছে, কিন্তু পার্বত্য চট্টগ্রামের মানুষের অধিকারের লড়াইয়ের চিত্র নেই।

প্রদর্শনীর সবচেয়ে পুরোনো আলোকচিত্রটি ১৯০৯ সালের। ছবিতে দেখা যায়, ব্রিটিশ ভারতের বেঙ্গল গভর্নমেন্টের গভর্নর ল্যান্সলট হেয়ারকে অভ্যর্থনা দেওয়া হচ্ছে। নানা আলোকচিত্রে ষাট ও সত্তরের দশক থেকে পাহাড়ি সমাজের পরিবর্তনের আঁচ পাওয়া যায়। ১৯৬১ সালের একটি ছবিতে বোমাং রাজপরিবারের সদস্যদের নিজেদের গাড়িতে চলাচল করতে দেখা যায়। সেকালের ছবিতে সোনালি অতীত দেখেছেন কেউ কেউ। মং নু মারমা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে বললেন, সেদিন আর এদিনের মিলিয়ে দেখলে খাপছাড়া মনে হয়।

দৃক গ্যালারি আয়োজিত ‘নিজের চোখে, নিজের ভূমিতে’ শিরোনামে শত বছরের আলোকচিত্র প্রদর্শনী ঘুরে দেখছেন দর্শকেরা। গত মঙ্গলবার বিকেলে বান্দরবানের রাজারমাঠ এলাকায়ছবি: মংহাইসিং মারমা।

লক্ষণীয় হচ্ছে, ১৯৬০ ও ১৯৭০-এর দশকের বেশির ভাগ আলোকচিত্র রাজপরিবারের সদস্যদের ধারণ করা। কারণও আছে বলে জানালেন অনেকে। তখন রাজপরিবার ছাড়া সাধারণ মানুষের কাছে ক্যামেরা ধরাছোঁয়ার বাইরে ছিল। আশির দশকে মংশৈ ম্রাই মারমা, চিন্ময় ম্রো সাধারণ মানুষের জীবনচিত্র ধারণ করেছেন। তাঁদের আলোকচিত্রে শিকারি ম্রোর জীবন, গোহত্যা উৎসব, ঐতিহ্যবাহী পোশাকে ত্রিপুরা, খুমি নারী, জুমচাষ, দুর্গম পাহাড়ের জীবনসংগ্রাম—অনেক কিছু পাওয়া যায়।

ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউটের পরিচালক নুক্রাচিং মারমা স্মৃতিকাতর হয়ে ছবিতে নিজের ও পরিচিতজনদের খুঁজছিলেন। বললেন, ‘ছবি কথা বলে জানতাম, কিন্তু সংরক্ষণ করতে হবে জানা ছিল না। ছবি সংরক্ষণের তাগিদ তৈরি করেছে দৃক গ্যালারির প্রদর্শনী।’

দৃক গ্যালারি আয়োজিত ‘নিজের চোখে, নিজের ভূমিতে’ শিরোনামে শত বছরের আলোকচিত্র প্রদর্শনী ঘুরে দেখছেন দর্শকেরা। গত মঙ্গলবার বিকেলে বান্দরবানের রাজারমাঠ এলাকায়।ছবি: মংহাইসিং মারমা।

প্রদর্শনী উদ্বোধন করেছেন দৃক গ্যালারির খ্যাতিমান আলোকচিত্রী কিউরেটর শহিদুল আলম। প্রদর্শনীতে যাঁদের ছবি স্থান পেয়েছে, তাঁদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন মংঙোয়েপ্রু চৌধুরী, নুশৈপ্রু চৌধুরী, চ থুই প্রু চৌধুরী, চিংশোয়েপ্রু মারমা, মং শৈ ম্রাই মারমা, চিন্ময় মুরুং, মংবোওয়াংচিং মারমা প্রমুখ। সভাপতিত্ব করেন দৃক গ্যালারির নির্বাহী পরিচালক রেহনুমা আহমেদ।

উদ্বোধনে শহিদুল আলম বলেছেন, ‘আমরা অনেক কথা বলি, কিন্তু প্রমাণ দিতে পারি না। আলোকচিত্র থাকলে কথা বলার দরকার নেই, আলোকচিত্রই কথা বলবে। দৃক গ্যালারি বিস্মৃত ইতিহাসের প্রামাণ্য দলিল হিসেবে আলোকচিত্র সংগ্রহ ও প্রদর্শনীর আয়োজনের উদ্যোগ নিয়েছে। তারই অংশ হিসেবে বান্দরবানে এক বছর ধরে আলোকচিত্র সংগ্রহ ও গবেষণার পর প্রদর্শনী হচ্ছে।’

You may also like

Leave a Comment

About Us

Lorem ipsum dolor sit amet, consect etur adipiscing elit. Ut elit tellus, luctus nec ullamcorper mattis..

Feature Posts

Newsletter

Subscribe my Newsletter for new blog posts, tips & new photos. Let's stay updated!