ক্রিকেট মাঠে প্রতিটি উইকেটই মূল্যবান। কিন্তু এক ইনিংসে প্রতিপক্ষ দলের পুরো ১০ উইকেট যদি একজন বোলারের দখলে আসে, তবে তা নিঃসন্দেহে এক অবিশ্বাস্য অর্জন। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এমন বিরল কীর্তি গড়েছেন মাত্র তিনজন—টেস্ট ক্রিকেটে ১০ উইকেট নেওয়ার ইতিহাসে উজ্জ্বল হয়ে আছেন কয়েকজন কিংবদন্তি। তবে প্রথম শ্রেণির ও ঘরোয়া ক্রিকেটেও এমন বিস্ময়কর মুহূর্ত ঘটেছে একাধিকবার।
১৯৩২ সালে কাউন্টি চ্যাম্পিয়নশিপে ইয়র্কশায়ারের হয়ে খেলতে নেমে হেডলি ভেরিটি নিয়েছিলেন ১০ রানে ১০ উইকেট। সেই ইনিংসটিই প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে এখনো সেরা বোলিং পারফরম্যান্স হিসেবে স্বীকৃত।
তবে সময় আরও পেছনে নিলে দেখা যাবে, ১৯২২ সালের ৬ মে এক আশ্চর্য রেকর্ড গড়েছিলেন একজন বোলার—কোনো রান না দিয়ে ১০ উইকেট। প্রতিপক্ষের সব ব্যাটসম্যানকেই বোল্ড করেন তিনি, যা ক্রিকেট ইতিহাসেই এক ব্যতিক্রমী ঘটনা। ইয়র্কশায়ারের জেলা পর্যায়ের একটি ম্যাচে ক্লিফে দলের হয়ে ইস্টরিংটনের বিপক্ষে এই কীর্তি গড়েন তিনি। তাঁর বোলিং পরিসংখ্যান ছিল—৫ ওভার, ৫ মেডেন, ০ রান, ১০ উইকেট।
ক্রিকেটের স্বীকৃত পরিসরের বাইরে শূন্য রানে ১০ উইকেট নেওয়ার ঘটনা ঘটেছে মোট ২৫ বার। তবে এমন ঘটনার মধ্যেও কিছু রেকর্ড একেবারেই অনন্য। যেমন, ১৯৯৪ সালে ইংল্যান্ডের ডারহামে বয়সভিত্তিক একটি টুর্নামেন্টে মাত্র ১৭ বছর বয়সী এক তরুণ বোলার পুনরায় এই কীর্তি গড়েন। এরপর আরও দুজন বোলার রান না দিয়ে ১০ উইকেট নিলেও, সবাইকে বোল্ড করতে পারেননি কেউই। সর্বশেষ এমন ঘটনা ঘটেছিল ১৯৯৮-৯৯ মৌসুমে ব্রিসবেনের এক টুর্নামেন্টে। সেবার একটি দলের হয়ে ডি মর্টন নামের এক বোলার শূন্য রানে প্রতিপক্ষের সব উইকেট তুলে নেন।
তবে শুধু রান না দিয়ে উইকেট নেওয়ার গল্পই নয়, প্রতিপক্ষের সব ব্যাটসম্যানকে বোল্ড করার নজিরও আছে ক্রিকেট ইতিহাসে। ১৮৫০ সালে লর্ডসে সাউথের বিপক্ষে নর্থ দলের হয়ে খেলতে নেমে সব উইকেট বোল্ড করেন একজন। তিনিই আবার সেই কিংবদন্তি, যাঁর নামেই আজ ক্রিকেট বিশ্বের সবচেয়ে মর্যাদাসম্পন্ন বার্ষিক সংকলনের নাম—উইজডেন। সেই ম্যাচে সাউথ অলআউট হয় ৭৬ রানে, আর উইজডেনের দল জয় পায় ইনিংস ও ১৯ রানে। তিন দিনের সেই ম্যাচটি শেষ হয়ে গিয়েছিল মাত্র এক দিনেই।
এই ঘটনাগুলো প্রমাণ করে, ক্রিকেট শুধু ব্যাট আর বলের খেলা নয়, এখানে ইতিহাস গড়া হয় দৃঢ়তা, প্রতিভা আর অপ্রতিরোধ্য মনোভাব দিয়ে।