বান্দরবানের পাহাড়ি অঞ্চলে প্রাকৃতিক বন ধ্বংসের ভয়াবহ চিত্র উঠে এসেছে। টঙ্কাবতী এলাকার দুর্গম পাহাড়ে কাঠ পাচারকারীরা হাতি দিয়ে গাছ টেনে নিচ্ছেন, এভাবে তিন মাস ধরে চলছে বন উজাড়ের নির্মম প্রক্রিয়া।
দুর্গম রঙ্গি খালের গহীনে গোপন আস্তানা
বান্দরবান সদর থেকে ২৩ কিলোমিটার দূরে রঙ্গি খাল ধরে চার কিলোমিটার ভেতরে পাওয়া যায় একটি অস্থায়ী শ্রমিক আস্তানা। বাঁশ দিয়ে তৈরি ঝুপড়িটিতে রান্নার সামগ্রী, কাপড়চোপড় ও হাতি বাঁধার দড়ি পাওয়া গেছে। ওই সময় কেউ উপস্থিত না থাকলেও ফেরার পথে কাঠশ্রমিক বাদশা ও জসীমের সঙ্গে দেখা হয়।
তাঁরা জানান, লোহাগাড়ার আবদুর রহিমের নির্দেশে তাঁরা গাছ কাটছেন। শিউরি, কড়ই, গুটগুট্যা সহ নানা প্রজাতির গাছ পাহাড়ে কেটে দুটি বড় ও দুটি বাচ্চা হাতি দিয়ে নিচে নামিয়ে গাড়িতে তুলে পাচার করা হয়। এই গাছগুলো শেষমেষ চলে যায় নাফারটিলা ও লোহাগাড়ায়।
পারমিটের নামে অপব্যবহার
কাঠশ্রমিকরা জানান, আবদুর রহিমের নামে টঙ্কাবতী মৌজার ১ হাজার ঘনফুটের একটি জোত পারমিট রয়েছে। কিন্তু গাছ কাটা হচ্ছে টাকের পানছড়ি ও হরিণঝিরি মৌজার বনাঞ্চল থেকে। স্থানীয় ম্রো জনগোষ্ঠীর অভিযোগ, এই পারমিটের ছত্রছায়ায় বনাঞ্চলের গাছ কাটা হচ্ছে, যা পানির উৎস শুকিয়ে ফেলছে, ফলে পরিবেশগত বিপর্যয় দেখা দিয়েছে।
আইনি দৃষ্টিকোণ ও প্রশাসনের অবস্থান
বন ও ভূমি অধিকার সংরক্ষণ আন্দোলনের সভাপতি জুয়ালিয়ান আমলাই স্পষ্ট করে বলেন,
“জোত পারমিট দিয়ে বনাঞ্চলের গাছ কাটা আইনত নিষিদ্ধ। এটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ।”
অন্যদিকে, অভিযুক্ত আবদুর রহিম এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন,
“ব্যক্তিগত জোত জমিতে বনের কিছু গাছ থাকতেই পারে। সেগুলো কাটা হয়েছে। দুর্গম এলাকায় হাতি ছাড়া গাছ আনা সম্ভব নয়।”
বন বিভাগের টঙ্কাবতী রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. রাফি উদ্দোল্লাহ জানান,
“হাতি দিয়ে গাছ টানার কথা শুনেছি, তবে দুর্গমতার কারণে নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে না। পারমিটের অপব্যবহার হলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
বান্দরবানের পাহাড়ি বনাঞ্চল কেবল গাছপালা নয়, জলবায়ু, জীববৈচিত্র্য ও পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর জীবিকার আধার। জোত পারমিটের নামে আইন লঙ্ঘন করে প্রাকৃতিক বন কেটে হাতি দিয়ে গাছ পাচার বন্ধ না হলে সামনে আরও ভয়াবহ পরিবেশ সংকট তৈরি হতে পারে।