বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, বিএনপি কখনোই নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে কাউকে নিষিদ্ধ করার পক্ষে নয়, বরং তিনি বিশ্বাস করেন যে, আওয়ামী লীগের ভাগ্য নির্ধারণের দায়িত্ব আদালতের। তিনি বলেন, “আদালতই আওয়ামী লীগের ভাগ্য নির্ধারণ করবে,” এমন মন্তব্য একটি জাতীয় দৈনিককে দেওয়া সাক্ষাৎকারে করেছেন তিনি। তাঁর মতে, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় সব সিদ্ধান্ত অবশ্যই আইনের মাধ্যমে হওয়া উচিত, এবং কোনো দল বা ব্যক্তির বিরুদ্ধে নির্বাহী আদেশ দিয়ে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা উচিত নয়।
সালাউদ্দিন আহমেদ বিএনপির ‘রিকনসিলিয়েশন’ বা পুনর্মিলন প্রক্রিয়া নিয়েও আলোচনা করেন। তিনি বলেন, “রিকনসিলিয়েশন এর সেরা উদাহরণ দক্ষিণ আফ্রিকায় রয়েছে, যেখানে পুনর্মিলনের মাধ্যমে রাষ্ট্রে স্থিতিশীলতা আনা সম্ভব হয়েছিল।” তিনি আরও বলেন, “এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ যে, কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের আগে রাষ্ট্রে ভারসাম্য বজায় রাখা হোক, যাতে দেশের মানুষের মধ্যে শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় থাকে।” তিনি জানিয়ে দেন, এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তিনি এবং তার দল দেশের ভবিষ্যতের জন্য একটি স্থিতিশীল রাষ্ট্র গঠনে অবদান রাখতে চায়। তবে তিনি বিশেষভাবে উল্লেখ করেন, যদি রিকনসিলিয়েশন প্রক্রিয়া সঠিকভাবে কাজ না করে, তাহলে তার দল ৩১ দফা প্রস্তাব অনুযায়ী রাজনৈতিক সমঝোতা খুঁজে বের করবে।
সংবিধান সংশোধন নিয়ে সালাউদ্দিন আহমেদ বলেন, “বিএনপি দীর্ঘদিন ধরে সংবিধানকে গণতান্ত্রিক করতে সংশোধনের কথা বলেছে, এবং এই অঙ্গীকার এখনও বহাল রয়েছে।” তিনি আরও বলেন, “সংবিধানে দুটি তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতার প্রয়োজন হয়, এবং যখন আমরা এই ধরনের সংশোধন আনতে সক্ষম হব, তখন সেগুলি ৯০ শতাংশ ঐকমত্যে আনা সম্ভব হবে। তবে উচ্চকক্ষে আনুপাতিক পদ্ধতির মাধ্যমে সরকার গঠন করা অসুবিধাজনক হতে পারে এবং এটি রাজনৈতিক স্থিতিশীলতায় বাধা সৃষ্টি করতে পারে।”
তিনি বিএনপির রাজনৈতিক অবস্থান এবং দলের বিভিন্ন কৌশল নিয়ে আরও বিস্তারিত কথা বলেন। তিনি বলেন, “আমরা বরাবরই বাস্তববাদী দল, এবং আমরা জানি যে আনুপাতিক নির্বাচনে সরকার গঠন অত্যন্ত জটিল হয়ে পড়ে, কারণ তখন কোয়ালিশন সরকার গঠন করতে হয় এবং এ জন্য বিভিন্ন দলের দাবির সাথে মিল রেখে সিদ্ধান্ত নিতে হয়।”
তিনি আরও বলেন, “বিএনপি বিশ্বাস করে যে, বিচার বিভাগকে কোনোভাবেই পক্ষপাতদুষ্ট করা উচিত নয়। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা, যা বিশেষভাবে সরকার পরিচালনার জন্য ব্যবহার করা হয়, এর মাধ্যমে বিচার বিভাগে পক্ষপাতিত্ব সৃষ্টি হতে পারে। তবে বিএনপি মনে করে, যদি গণতান্ত্রিক চর্চা ঠিকভাবে চলে, তাহলে হয়তো তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা আর প্রয়োজন পড়বে না।”
পঞ্চম এবং একাদশ সংশোধনীর প্রসঙ্গও তিনি তুলেন। তিনি বলেন, “যেহেতু একাদশ সংশোধনীর ক্ষেত্রে সংসদের অনুমোদনের আগেই এটি কার্যকর হয়েছিল, সুতরাং এবারও যদি রাজনৈতিক ঐকমত্য তৈরি হয়, তবে ঐকমত্যের ভিত্তিতে সংবিধান সংশোধন করা যেতে পারে।” তবে, তিনি মনে করেন, যদি সংবিধান পরিবর্তন করতে হয়, তা অবশ্যই আইনানুগভাবে করা উচিত, যাতে জনগণের জন্য আইনি বাধ্যবাধকতা তৈরি হয়।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে অভিযুক্ত হলে নির্বাচনে অযোগ্য হওয়ার প্রস্তাব নিয়ে সালাউদ্দিন আহমেদ বলেন, “পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে এমন রীতি রয়েছে যে, দণ্ডিত হওয়ার আগে কাউকে নিরপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয়। আমাদের দেশে যদি অভিযুক্ত ব্যক্তিকে নির্বাচনে অযোগ্য করা হয়, তাহলে তা আন্তর্জাতিকভাবে সমর্থনযোগ্য হবে না।” তিনি বলেন, “আওয়ামী লীগের বিচারের জন্য বিএনপি দৃঢ়ভাবে কাজ করছে, কিন্তু এ কাজ অবশ্যই আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে হতে হবে।”
অবশেষে, তিনি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের অংশগ্রহণ বিষয়ে বলেন, “আওয়ামী লীগের রাজনীতি করার অধিকার আছে কিনা, সেটা জনগণই ঠিক করবে।” তাঁর মতে, “এটি একটি সাংবিধানিক বিষয়, এবং আইনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগকে বিচার করা হবে।”
এই মন্তব্যের মাধ্যমে সালাউদ্দিন আহমেদ বিএনপির অবস্থান পরিষ্কার করেছেন যে, দলটি গণতান্ত্রিক মূল্যবোধে বিশ্বাসী এবং আইনের শাসনের মাধ্যমে সকল রাজনৈতিক দল ও জনগণের অধিকারের সুরক্ষা চায়।