পার্বত্য অঞ্চলের নৃ-গোষ্ঠীর বিলুপ্তপ্রায় ভাষাগুলো পুনরুদ্ধারে সরকারি উদ্যোগ আরও জোরদার করার আহ্বান জানিয়েছেন পার্বত্য চট্টগ্রাম-বিষয়ক উপদেষ্টা। তিনি বলেন, এই ভাষাগুলোর সংরক্ষণে পাঠ্যপুস্তক প্রণয়ন, বিতরণ ও বাস্তবায়নের কাজকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিতে হবে।
রাজধানীর মতিঝিলে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত এক কর্মশালায় তিনি এসব কথা বলেন। কর্মশালার বিষয় ছিল ‘প্রাথমিক স্তরের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর পাঁচটি ভাষায় পাঠ্যপুস্তক প্রণয়ন, বিতরণ ও বাস্তবায়ন সংক্রান্ত বিষয়াদি পর্যালোচনা’।
তিনি বলেন, দেশে ৪১টি নৃ-গোষ্ঠীর ভাষা চিহ্নিত করা হলেও বর্তমানে কেবল পাঁচটি ভাষায় শিক্ষাক্রম চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। অথচ আরও অনেক ক্ষুদ্র সম্প্রদায় রয়েছে, যাদের ভাষাও সংরক্ষণের দাবি রাখে। যেমন, পার্বত্য চট্টগ্রামের লুসাই জনগোষ্ঠী মাত্র আড়াই হাজার হলেও তাদের মাতৃভাষাকেও পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত করা উচিত।
উপদেষ্টা আরও বলেন, ভাষা হচ্ছে সংস্কৃতির প্রধান বাহক। তাই শুধু পাঁচটি নয়, অন্যান্য ভাষাগুলোকেও সংরক্ষণ ও চর্চার মধ্যে রাখতে হবে। দুর্গম পার্বত্য এলাকায় বসবাসকারী ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠীরাও এখন আর পিছিয়ে থাকতে চায় না। তারা দেশের মূলধারার শিক্ষায় সংযুক্ত হতে আগ্রহী।
তিনি জানান, প্রাথমিকভাবে প্রি-প্রাইমারি থেকে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত স্থানীয় ভাষায় পাঠদান শুরু হবে। এরপর উপজেলা পর্যায়ে হোস্টেল নির্মাণ করে দুর্গম এলাকার শিক্ষার্থীদের জন্য আবাসনের ব্যবস্থা করা হবে। এতে শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া রোধ হবে এবং মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।
উপদেষ্টা বলেন, ইংরেজি, গণিত ও বিজ্ঞানের প্রতি ভীতি দূর করতে হবে শিক্ষার্থীদের মধ্যে। এজন্য দক্ষ শিক্ষকের প্রয়োজন। বর্তমানের শিক্ষক সংকট মোকাবিলায় বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। একজন দক্ষ শিক্ষক একাধিক বিদ্যালয়ে পর্যায়ক্রমে পাঠদান ও পরিদর্শনের দায়িত্ব পালন করবেন।
তিনি আরও বলেন, পার্বত্য এলাকার উন্নয়নে তাঁর দ্বিতীয় অগ্রাধিকার হলো জীবিকায়ন বা ‘লাইভলি হুড ডেভেলপমেন্ট’। অর্থাৎ, স্থানীয় জনগণের অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নয়ন। আর তৃতীয় অগ্রাধিকার হিসেবে তিনি পরিবেশ রক্ষাকে গুরুত্ব দিয়েছেন।
কর্মশালায় সভাপতিত্ব করেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব। উপস্থিত ছিলেন পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব (রুটিন দায়িত্বে), প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (বিদ্যালয়), এনসিটিবির চেয়ারম্যানসহ অন্যান্য কর্মকর্তারা। অনুষ্ঠানে কর্মপরিকল্পনা উপস্থাপন করেন এনসিটিবির ঊর্ধ্বতন এক বিশেষজ্ঞ।