দীর্ঘদিন নানা শারীরিক জটিলতার সঙ্গে লড়াই করে শেষ পর্যন্ত ৮৮ বছর বয়সে পরপারে পাড়ি জমিয়েছেন রোমান ক্যাথলিক খ্রিস্টানদের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা, মহামান্য পোপ। তাঁর মৃত্যুর খবরে শোকস্তব্ধ বিশ্বজুড়ে খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীরা। এখন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু—কে হবেন নতুন পোপ? তবে উত্তরসূরী যেই হোন না কেন, এই নির্বাচন এবং পূর্ববর্তী আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হয় কিছু শতাব্দী পুরোনো প্রথা অনুসরণ করে।
পোপের মৃত্যুর পর প্রথমেই ভ্যাটিকান সিটির ক্যামেরলেংগো—যিনি পোপের অনুপস্থিতিতে প্রশাসনিক দায়িত্ব পালন করেন—তাঁর মৃত্যু নিশ্চিত করেন। এরপর বিশ্বজুড়ে ক্যাথলিক গির্জার নানা স্থানে খবর পাঠানো হয় এবং আনুষ্ঠানিকভাবে শোক পালনের ঘোষণা দেওয়া হয়।
পোপকে তাঁর সম্মানে যথাযথ রীতিতে শেষ বিদায় জানানো হয়। সাধারাণত এই অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া হয় সেন্ট পিটার্স বাসিলিকায়, যেখানে হাজার হাজার মানুষ অংশগ্রহণ করেন। অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার আগে তিন দিন ধরে পোপের মরদেহ রাখা হয় দর্শনার্থীদের শ্রদ্ধা জানানোর জন্য।
এরপর শুরু হয় নতুন পোপ নির্বাচনের প্রক্রিয়া। এই নির্বাচনকে বলা হয় “কনক্লেভ”। নির্বাচনের জন্য ভ্যাটিকান সিটিতে জড়ো হন নির্বাচনের যোগ্য কার্ডিনালরা। সাধারণত ৮০ বছরের নিচে বয়স যাঁদের, তাঁরাই ভোটাধিকার পান। তাঁরা একটি নির্দিষ্ট স্থানে বিচ্ছিন্নভাবে অবস্থান করেন, যাতে বাইরের কোনো প্রভাব না পড়ে। একাধিক ধাপে চলে ভোটগ্রহণ। একজন পোপ নির্বাচিত হতে হলে দুই-তৃতীয়াংশ ভোট পেতে হয়।
ভোট শেষে যদি কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছানো না যায়, তাহলে সাদা ধোঁয়া নয়, বরং কালো ধোঁয়া নির্গত হয় সিস্টিন চ্যাপেল থেকে, যা জানিয়ে দেয় এখনো নতুন পোপ নির্বাচিত হননি। আর যখন একজন কার্ডিনাল নির্দিষ্ট সংখ্যক ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন, তখন সাদা ধোঁয়া ছড়িয়ে পড়ে আকাশে। তখন বিশ্ববাসী জানতে পারে—নতুন পোপ নির্বাচিত হয়েছেন।
এরপর নির্বাচিত পোপ তাঁর নতুন নাম ঘোষণা করেন এবং ভ্যাটিকানের বারান্দা থেকে বিশ্বের প্রতি প্রথমবারের মতো আশীর্বাদ প্রদান করেন।
এইভাবে রোমান ক্যাথলিক ধর্মবিশ্বে পোপের মৃত্যু এবং উত্তরসূরি নির্বাচন সম্পন্ন হয় এক প্রাচীন ও গম্ভীর ধর্মীয় রীতিনীতির মাধ্যমে।