শ্রীমঙ্গল, বাংলাদেশের চায়ের রাজধানী, প্রতিদিনের ব্যস্ততা ও শহরের কোলাহল থেকে কিছুটা দূরে, এক শান্ত পরিবেশে আপনাকে স্বাগত জানায়। সকাল ৮টা। শ্রীমঙ্গল শহরের ভেতরে প্রবেশের সাথে সাথে এক নতুন রূপের শুরু হয়। পুরো শহরটি যেন এক চায়ের বাগানে পরিণত হয়েছে। কলেজ রোড ধরে ভাড়াউড়া চা বাগানের দিকে এগিয়ে যেতেই আপনি অনুভব করবেন শহরের পরিবেশের বদল।
এসময় স্থানীয় একজন তরুণ আমাকে সঙ্গী হিসেবে ছিলেন, যার মুখে মুচকি হাসি যেন বলছিল, “এ তো কেবল শুরু।” তিনি বর্তমানে প্রবাসী এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে একসাথে পড়াশোনা করার সময় থেকেই আমাদের মধ্যে গভীর বন্ধুত্ব গড়ে উঠেছিল। দেশে আসার সুবাদে তিনি আমাকে শ্রীমঙ্গলে যাওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানান।
আমার যাত্রা শুরু হয়েছিল বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টায় ঢাকা বিমানবন্দর রেলস্টেশন থেকে। কালনী এক্সপ্রেসের ট্রেনে চড়ে ভিড়ের মধ্যে রওনা হই। ট্রেনের যাত্রা ছিল শান্তিপূর্ণ, এবং যদি বাসে যেতে চান, মহাখালী থেকে এনা পরিবহনের বাসও সহজ পছন্দ হতে পারে।
শ্রীমঙ্গলে পৌঁছানোর পর প্রথমেই আমার ঠিকানা ছিল কলেজ রোডের গ্রিন লিফ গেস্ট হাউজ। সেখানে থাকার জন্য তেমন চিন্তা করার দরকার হয়নি, কারণ একক সফরে থাকা সাশ্রয়ী ছিল। খাবারের জন্য শ্রীমঙ্গল শহরের ‘রসই ঘর’ রেস্টুরেন্টে খাওয়া যেতে পারে, যেখানে বাঁশের ভেতরে রান্না করা মুরগি পরিবেশন করা হয়। এছাড়া, সাধারণ খাবারের জন্য টি-ভ্যালি রেস্টুরেন্টও বেশ ভালো।
শ্রীমঙ্গলের মূল আকর্ষণ ছিল ভাড়াউড়া চা বাগান। এখানে গেলে সকাল বেলা চায়ের বাগানের অপরূপ সৌন্দর্য আপনাকে মন্ত্রমুগ্ধ করবে। শীতকাল হওয়ায় শাপলা বিলের পানি অনেকটাই শুকিয়ে গিয়েছিল, তবে গোলাপি শাপলার সৌন্দর্য অপরূপ।
পাহাড়ি অঞ্চলে ট্রেন দেখার শখ ছিল, তাই রোববার সকালের ভ্রমণে আমরা রেললাইন ধরে হাঁটতে শুরু করি। এই পথে হাঁটার সময় অনেক সতর্ক থাকতে হয়, কারণ রেললাইনের পাশে চলাচল করার জন্য সঠিক জায়গা পাওয়া কঠিন। কিন্তু, অবশেষে নাগ মন্দির টিলার কাছাকাছি গিয়ে আমরা শ্রীমঙ্গলের এক অসাধারণ দৃশ্য দেখলাম—ঝিরির পানি, ছোট রেলসেতু, চায়ের বাগান এবং রাবার বাগান সব একসাথে মিলিয়ে।
শ্রীমঙ্গলে গেলে চা-পর্যটন আর সাতরঙা চা খাওয়া যেন বাধ্যতামূলক। নীলকণ্ঠ টি-কেবিনে গিয়ে চা পান করা একটি বিশেষ অভিজ্ঞতা।
শুক্রবার পুরো দিন শ্রীমঙ্গলের ভ্রমণে পার হয়ে যাওয়ার পর শনিবার লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের উদ্দেশ্যে যাত্রা করি। লাউয়াছড়ার ট্রেইল বেশ রোমাঞ্চকর, এবং খাসিয়া পুঞ্জি পর্যন্ত পৌঁছানোর পর গ্রামের পরিবেশ এবং চা দোকানে বসে চায়ের স্বাদ নেওয়া খুবই বিশেষ অনুভূতি।
এছাড়া, মাধবপুর লেকের সৌন্দর্য কিছুটা শীতের কারণে কম ছিল, তবে বর্ষাকালে এখানে আসলে দারুণ সৌন্দর্য্য দেখা যাবে।
এই ভ্রমণে শ্রীমঙ্গলের চা শ্রমিকদের সঙ্গে কথোপকথন ছিল একটি স্মরণীয় অভিজ্ঞতা। তাদের জীবনের চ্যালেঞ্জ ও চা-শ্রমিকদের জীবনযাত্রার বাস্তবতা জানার সুযোগ পেয়ে আমি প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম, তাদের কথা লিখে রাখবো।
শেষে, শ্রীমঙ্গলে যাত্রা করার পর কিছু বিষয় মনে রাখতে হবে:
পকেটের ব্যাগ হালকা রাখুন।
সঙ্গে পানি রাখুন।
ভ্রমণের সেরা সময় হলো বর্ষাকাল বা ডিসেম্বর মাস।
সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনায় চা বাগান এবং শ্রমিকদের ব্যক্তিগত নিয়ম অনুসরণ করুন।
শ্রীমঙ্গল, চায়ের দেশ, প্রতিটি ভ্রমণপ্রেমীর জন্য এক অনন্য অভিজ্ঞতার স্থান।